নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন

ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলন্ত বাসে ডাকাতির পাশাপাশি নারী যাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণহীন এবং জনপরিসরে নারীদের নিরাপত্তা যে ঝুঁকিপূর্ণ—এ ঘটনা তারই একটি উদাহরণ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা এবং সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা ইউনিক রোড রয়েলসের ‘আমরি ট্রাভেলস’–এর একটি বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। যাত্রীদের ভাষ্যমতে, সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাস ছাড়ে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসে ডাকাতি শুরু হয়। তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতি এবং দু-তিনজন নারীকে যৌন নিপীড়ন করে ডাকাতেরা বাস থেকে নেমে যায়।

এরপর বাসের চালক, তাঁর সহকারী ও সুপারভাইজারের নানা টালবাহানা সত্ত্বেও যাত্রীরা বাসটি নিয়ে মামলা করার জন্য টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় যান। সেখানে তখন থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ছিলেন না বলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার পরে বাসটি বড়াইগ্রাম থানায় ঢোকানো হলেও কোনো মামলা নেওয়া হয়নি।

ডাকাতির ঘটনায় বাসের সুপারভাইজার, চালক ও চালকের সহকারীকে আটক করেছিল পুলিশ। নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলি আদালত সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় তাঁদের আদালতের সামনে হাজির করলে আদালত শুনানি শেষে জামিনের আদেশ দেন। এদিকে গতকাল শনিবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে, এমন খবর পাওয়া গেছে।

লক্ষণীয় হলো, ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনাটি সোমবার রাতে হলেও পুলিশ এ-সংক্রান্ত মামলাটি নিয়েছে তিন দিন পর অর্থাৎ শুক্রবার। ‘ধর্ষণ’, যৌন নিপীড়ন এবং ডাকাতির এ রকম গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মামলা নিতে বিলম্ব হলো কেন? পুলিশ কি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি আমলে নেয়নি—এ রকম প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের সময়ক্ষেপণ ও শৈথিল্য যে স্পষ্ট, তা প্রমাণিত হয়েছে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামকে থানা থেকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।

ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় তিন দিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় হওয়া মামলায় বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে আসামি না করায় প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা। এ ছাড়া অভিযোগ উঠেছে, মামলার বাদীকে পুলিশ এজাহারের বর্ণনা পড়ে শোনাননি। মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশের এ রকম ভূমিকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মামলার শুরুতেই এ রকম অবহেলা বা গাফিলতি করলে পরে নানা জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

বাসে ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় শহীদ দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল সংগ্রহ করতে যাওয়া এক স্কুলছাত্রীকে (১১) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। একের পর এক এ রকম ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে এখন বেশ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

বিগত স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল। এ সরকারের মেয়াদ ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি কমেনি; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও প্রত্যাশিত উন্নতি লক্ষ করা যায়নি। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু হয়েছে। এরপরও অন্তর্বর্তী সরকার কেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

Maniruzzaman

I am Maniruzzaman, a free thinker and political commentator, dedicated to unraveling the complexities of Bangladesh’s political landscape.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button