চাঁদাবাজি: একটি ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি এবং আমাদের করণীয়
বাংলাদেশে বর্তমানে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে চাঁদাবাজি। দিনকে দিন এটি যেন আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। ব্যবসা, পরিবহন, নির্মাণ, এমনকি স্কুল-কলেজের মতো জায়গাতেও এখন চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য দেখা যাচ্ছে। এই সমস্যাটি কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরো সমাজ ও দেশের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
চাঁদাবাজির প্রভাব
চাঁদাবাজির ফলে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর প্রতিদিনের আয়ে বড় অংশ কেটে যায়। যারা রিকশা চালান, ট্রাক চালান বা গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন করেন, তারাও বিভিন্ন সময়ে ‘অবশ্য দিতে হবে’ এমন দাবি বা হুমকির মুখে পড়েন। এতে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হন, বেকারত্ব বাড়ে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। শুধু তাই নয়, এই অবৈধ অর্থ বহু ক্ষেত্রে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করে।
তাহলে সমাধান কী?
চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকেই ভূমিকা রাখতে হবে। তবে সরকারের করণীয়গুলো হতে পারে এমন:
১. কঠোর আইন প্রয়োগ
চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। থানাগুলোর প্রতি নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন চাঁদাবাজির অভিযোগে কোনো গাফিলতি না থাকে।
২. রাজনৈতিক সদিচ্ছা
চাঁদাবাজির সঙ্গে যাদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ভয় পেলে এ সমস্যা কখনোই বন্ধ হবে না। সরকারকে এই বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে।
৩. তথ্য সংগ্রহ ও হটলাইন
নাগরিকদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ও গোপন হটলাইন চালু করতে হবে, যেখানে তারা চাঁদাবাজির অভিযোগ জানাতে পারবেন। এই তথ্যগুলোর ভিত্তিতে দ্রুত তদন্ত এবং ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
৪. সচেতনতা গড়ে তোলা
চাঁদাবাজিকে সামাজিকভাবে ঘৃণা করা প্রয়োজন। মিডিয়া, ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে, যেন মানুষ ভয় না পায়, প্রতিবাদ করে।
৫. দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি যদি চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকে, তার বিচার যেন টিভির পর্দায়, পত্রিকার হেডলাইনে আসে — যাতে কেউ আর এ পথে হাঁটতে সাহস না করে।
শেষ কথা
চাঁদাবাজি বন্ধ করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা যদি সকলে সচেতন হই, প্রতিবাদ করি এবং সরকারের কার্যক্রমে সহায়তা করি — তাহলে চাঁদাবাজি একদিন ইতিহাসে পরিণত হবেই।
আসুন, আমরা ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াই — চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।

