আমাদেরকে দায় নিতেই হবে
মাইলস্টোন স্কুল ট্রাজেডি
ঢাকার উত্তরায় ২১ জুলাই, দুপুর ১টা ৬ মিনিটে আকাশ ভেঙে পড়েছিল স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতিতে গড়া মাইলস্টোন স্কুলে। বাংলাদেশের বিমান বাহিনী ব্যবহৃত চীনা নির্মিত F‑7 BGI প্রশিক্ষণ জেট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে স্কুলের উপর দিয়ে আছড়ে পড়ে। এর ফলে প্রাণ হারায় অন্তত ২০–৩১ জন, যার অধিকাংশই শিশু—ছাত্র, এক শিক্ষক, ও পাইলট ।
বিকট শব্দ, ধোঁয়া, আগুন আর চিৎকারে পালিত সেই মুহূর্তটি ভয়াবহভাবে ইতিহাসে খোদাই হলো।
এক শিক্ষার্থী স্মৃতিচারণ করে বললেন:
> “We saw the plane engulfed in flames as it heading towards us, then it crashed directly into the building… Smoke and screams filled the air.”
দুর্ঘটনার পর ছাত্ররা ক্ষুব্ধ প্রতিবাদের মুখে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে—তারা চেয়েছে ‘জবাবদিহি’, ‘পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ’, আর ‘অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা’ । এমন দাবির মাঝে একটি প্রশ্ন উথলে: কেন পুরনো ও নিরাপত্তাহীন F‑7 BGI হামাগুড়ি মারছিল ঢাকা শহরের আকাশে? বিশ্লেষকরা বলছেন—চীনা এই জেটগুলি ‘মিগ‑২১ ভিত্তিক’ অনেক পুরনো মডেল, যার দুর্ঘটনার ভয়াবহ ইতিহাস আছে ।
এই দুর্ঘটনায় ক্ষতি অনিবার্য, কিন্তু দায়–দায়িত্ব দীর্ঘমেয়াদে এড়িয়ে চললে ভবিষ্যত আরও ভয়ংকর হতে পারে। পাইলট প্রথম একক ফ্লাইটে ছিলেন—যান্ত্রিক ত্রুটির শিকার হয়েছিলেন—এদিকে যাত্রীহীন জেটটি স্কুলে আছড়ে পড়ার আগে একটি খোলা জায়গায় নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন—এটি যে স্বেচ্ছা বলিদান, তা সাক্ষ্য দেয় । কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—আজও কি আমরা সীমিত স্বার্থে নিরাপত্তার মূল্য কম ভাবি?
সরকার ও বিমান বাহিনী একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, এবং ক্ষতিগ্রস্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ আঘাতপ্রাপ্তদের পরিবারকে সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়েছে । তবে তদন্ত হলে কী, একটা পেপার কমিটি দিয়ে মাসের পর মাস সময় নিলে কী বাস্তবকথা মুখোছবে? একাধিক ‘দিন বাদে দল পরের মর্মান্তিকতা’ চক্রটি আর চালু রাখার সময় হয়তো এসেছে না।
দেশ জুড়ে শোকের ছায়া—রাষ্ট্রীয় শোক পালিত, পতাকা অর্ধনমিত পতিত। কিন্তু এ কি শুধু শোকনীতি? দেশের ভবিষ্যৎ—ছেলে-মেয়েরা—এরই প্রতিশ্রুতি। আরেকবার সাহস নেই প্রত্যেক বাবা–মায়েকে তাঁদের শিশুকে বিদায় জানাতে কফিন হাতে। এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা কি আমরা পারিনি?