দুর্নীতি ঠেকাতে বিশেষ পদক্ষেপ দরকার
বাংলাদেশে উন্নয়নের গতি দৃশ্যমান। বড় বড় প্রকল্প, অবকাঠামো, প্রযুক্তি—সবই এগোচ্ছে। কিন্তু একই সঙ্গে এক দুঃসহ বাস্তবতাও বারবার সামনে আসে: দুর্নীতি। এই ব্যাধি যেন আমাদের অগ্রগতির পথে অদৃশ্য শিকল। যদি এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবে না।
রাজনৈতিক সদিচ্ছা: সবকিছুর শুরু
দুর্নীতি রোধ করতে হলে সবার আগে দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা। ক্ষমতাসীনরা যদি দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন, তবে কোনো আইনই কার্যকর হবে না। তাই নিজেদের ঘর থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে হবে।
দুদককে সত্যিকারের স্বাধীনতা
দুর্নীতি দমন কমিশন অনেক সময় নামেই স্বাধীন। তাদের হাতে যদি প্রকৃত ক্ষমতা না থাকে, তবে কোনো অর্থই নেই। তদন্ত, মামলা ও বিচার—সব ধাপে দুদকের পূর্ণ স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।
প্রযুক্তির ব্যবহার
ডিজিটাল বাংলাদেশ কেবল স্লোগান নয়, এটি দুর্নীতি রোধের বড় হাতিয়ার হতে পারে। অনলাইন টেন্ডার, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল পেমেন্ট—এসব ব্যবস্থা থাকলে ঘুষ ও ফাইলবন্দি সংস্কৃতি অনেকটাই কমে যাবে।
দ্রুত বিচার ও দৃশ্যমান শাস্তি
দুর্নীতির মামলার বিচার যদি বছরের পর বছর ঝুলে থাকে, তবে তা দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করে। তাই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার ও দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের শক্তি
স্বাধীন গণমাধ্যম, ব্লগার, এবং নাগরিক সমাজ দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের প্রধান শক্তি হতে পারে। মানুষ যদি ভয় ছাড়া অভিযোগ জানাতে পারে, তবে প্রশাসনও সতর্ক থাকবে।
শিক্ষা ও নৈতিকতার চর্চা
দীর্ঘমেয়াদে সমাধান একটাই—নৈতিকতা গড়ে তোলা। স্কুল-কলেজে নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে সৎ চরিত্রের অনুপ্রেরণা দিতে হবে।
—
শেষ কথা
বাংলাদেশে দুর্নীতি শুধু আইন দিয়ে ঠেকানো যাবে না। লাগবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, স্বচ্ছ প্রশাসন, প্রযুক্তির ব্যবহার, নাগরিক সমাজের জাগরণ এবং শিক্ষা। এখন সময় বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার। নাহলে দুর্নীতি আমাদের স্বপ্নকে প্রতিদিন গিলে খাবে।